শ্রাবনের আকাশ মেঘের তুলোর পাহাড় গুলো উড়ে যাওয়া দেখতে খারাপ লাগছে না। মেঘেদের কাছাকাছি চিল গুলো যেন এক একটি বিন্দু , পোকার মত উড়াউড়ি করছে নিজ খেয়ালে নিজেদের মাঝে বৃত্তাকার ঘুর্ন্নয়নের প্রাকৃতিক সহজাত খেলা। আমরা ঘুরছি পৃথিবীর সাথে এবং নিয়তির নিয়মে। বর্ষার কদম ফুটে আছে গাছে, কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই । আকাশ ভেঙ্গে রোদের তাপ শরীরের চামড়া পুড়ে মাংস সিদ্ধ হয় হয় উপক্রম। পানির পিপাসায় গলা শুকিয়ে মুরু ভুমির বালির মত উত্তপ্ত হচ্ছে মনে হচ্ছে শরীর আমার এখনি বালিতে রূপান্তর হয়ে মাটিতে মিশে যাবো ।
বর্তমান যুগের পানি বিক্রয় করা হকারই মোঘল আমলের ভিস্তিওয়ালা । মোঘল নবাব হুমায়ূন একবার পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছিলেন , তখন তাকে পানি থেকে উদ্ধার করেছিলেন এক ভিস্তিওয়ালা । সেই ভিস্তিওয়ালা কে নবাব কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তার আসনে একদিনের জন্য আসীন করেছিলেন । ছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরি পানি সংরক্ষনের থলে কে ভিস্তি বা মশক বলে । ঐ থলেতে করে পানি সরবরাহ করে যারা জীবিকা নির্বাহ করতো তাদের কে ভিস্তিওয়ালা বলে ডাকা হতো । অভিবক্ত ভারতবর্ষের ঢাকা ও কলকাতায় পানি বিলানোর কাজ করতেন এই ভিস্তিওয়ালারই । কাঁধে পানি ভরতি চামড়ার ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন মুসলিম সম্প্রদায়ের এই ভিস্তিওয়ালারা । মুঘল সম্রাট হুমায়ন সেই ভিস্তিকে একদিনের মুঘল সা¤্রাজের সম্রাট বানিয়েছিলেন তার নাম ছিল নিজাম ভিস্তি । ১৮৩০ সালে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট হেনরি ওয়াান্টারস এক আদম শুমারিতে ১০টি ভিস্তি পল্লির উল্লেখ করেছিলেন । স্থানীয়রা ভিস্তিদের বলত সাক্কা । কালক্রমে এই সাক্কা সিক্কিতে পরিনত হয়ে সিক্কিটুলিতে রূপ নিয়ে হারিয়ে যাওয়া সেই ভিস্তিওয়ালাদের স্মৃতি বহন করছে ।
কাকতালীয় বিষয় হচ্ছে সম্রাট কে পানি থেকে উদ্ধার করেছিল ভিস্তিওয়ালা নিজাম তার ফাঁপা ভিস্তি পানিতে ছুড়ে আর সেই ফাঁপা ভিস্তিতে ভর করে সম্রাট কিনারায় উঠে আসে । আর আমাকে ১লিটার পানি দিয়ে পিপাসা মিঠিয়েছে যে তার নাম ও কিন্তু নিজাম । নিজাম ভ্রামমান পানি চা সিগারেট বিক্রেতা ।
নিজাম এর গ্রামের বাড়ি শ্রীমঙ্গলের দিকে । হাওড় এলাকার লোক, তাদের সহজ সরল মুখ খানা খুব মায়া কাড়ে। বিশ^বিদ্যালয় এলাকায় হকারি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আমার কাছে হুমায়নের মত সিংহাসন নেই যে তাকে একদিনের সম্রাট বানিয়ে দিবো । আজ রোদের তীব্র গরমে মানুষেরা শুধু হাহুতাস করছে না, গাছের ডালে কাক গুলো হাওয়াই মিঠাইয়ের মত চুপষে যাচ্ছে কা কা শব্দ যেন উচ্চ শব্দ তরঙ্গের কম্পাংক তৈরি করতে পারছে না তাই বাতাসে শব্দ বেশি দূর যাচ্ছে না । কাক দম্পতির বিরক্তি মনে হচ্ছে, এই গরমে ডিমে কি তা দিবে নিজেই তো সিদ্ধ হওয়ার উপক্রম । এই বর্ষায় তাদের সংসারে ফুটফুটে কালো রংয়ের বাচ্চারা ডিমের খোলস ভেঙ্গে বের হবে, প্রাকৃতিক নিয়মে নাকি তাদের ইচ্ছায় বংশ রক্ষার জন্য? বাসা পরজীবী পাখিদের বংশ বিস্তার প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তারা হয়তো নিজেদের বাসস্থানের অভাবে বা সময়ের অভাবে বাসা পরজীবী পাখিরা অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে এবং যে পাখির বাসায় ডিম পাড়ে তাদের বাচ্চাদের সাথে ঐ বাসা পরজীবী পাখির বাচ্চা বড় হয় । কোকিল বাসা পরজীবী পাখিদের মধ্যে অন্যতম । কাকের বাসায় ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা ফুটায় । এতে বাসা পরজীবী পাখিদের বংশ বিস্তারের জন্য সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাদের বাচ্চা অধিকাংশ সময় বাসার অধিকারীনির দ্বারা হত্যা হয় । কাক দম্পতি কি কোকিলের ডিম পাড়ার বিষয়ে অবগত আছে তাই তো পাশের রাধাচ‚ড়া গাছে বসে থাকা কোকিল কে তাড়া করলো । কোকিল ও হয়তো সুযোগের অপেক্ষা আছে কাক দম্পতির অগোচরে তাদের বাসায় ডিম পাড়তে পারলে সে আগামীর বংশধর পাবে । আর বসন্তে কুহ কুহ শব্দে প্রকৃতিতে বসন্তের সময় কাল জানান দিবে ।
শুধু পাখিদের মাঝে বাসা পরজীবীতা দেখা যায় না, বর্তমানে মানুষের মাঝে দেখা যাচ্ছে যে গর্ভ ভাড়া দিচ্ছে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য এটাও এক ধরনের পরজীবীতা নয় কি? টেষ্ট টিউব,জিন ক্লোনিং আরও কত কি পদ্ধতি উদ্ভাবন হচ্ছে বিজ্ঞানের এই যুগে । বিজ্ঞানের সকল উদ্ভাবনের সুফল ও কুফল দুটো দিক আছে । আমার মতে সুফলের চেয়ে মানুষ কুফলের প্রতি আকৃষ্ট হয় বেশি । বিজ্ঞানের প্রযুক্তির জন্য মানুষের হাতে হাতে মোবাইলের মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডিভাইস দিয়ে পুরো পৃথিবীটা কে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা হয়েছে । এতে সুফলের চেয়ে কুফলের উদাহরন সমাজে বেশি দেখা যাচেছ । সামাজিক অবক্ষয় মূলক কর্মকান্ডে যুব সমাজ গা বাসিয়ে সাঁতার কাটছে । এতে করে রাষ্ট্রিয় বা পারিবারিক বাঁধার সম¥ক্ষিন হচ্ছে না, অবক্ষয়মূলক কাজগুলো আজ স্বাভাবিক কর্মকান্ডে পরিগনিত হচ্ছে বা হবে ।
অনলাইনে উপস্থিত | |
সদস্য: ০ | অতিথি: ১ |
৩৩০৮৭ | |
আজ | ৩ |
গতকাল | ৪ |
এই সপ্তাহে | ১৫ |
এই মাসে | ৩৫ |