বুদ্ধির ঔষধ
বাউন্ডূলে রবীন
ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা পড়া ভালো করার জন্য অনেক চিকিৎসা দেখেছি কবিরাজি,মাওলানা , ফু, তাবিজ আমলকি, ভহেরার চিকিৎসা । কোন চিকিৎসাই কাজে আসেনা যদি ইচ্ছা শক্তি না জাগে । তবে আমাদের ধর্ম ইসলাম জ্ঞান বৃদ্ধি করার জন্য জ্ঞান বৃদ্ধির তজবি(রাব্বি জিধনি ঈলমা) দিয়ে দিয়েছেন দয়াময় । আমি ছোট বেলা থেকে একটু উড়ন্তপনা টাইপের ছিলাম । শুধু মনের আকাশে উড়ে বেড়ানো এক ডাল থেকে অন্য ডালে, পড়া লেখার প্রতি ততটা মনোযোগি ছিলাম না । রাতের বেলা ঘন্টা দেড়েক পড়লে স্কুলের পড়া হয়ে যেত । আমার পরিবারে সদস্যরা বিষয়টা অনুধাবন করতে পারতো, আমার মরিয়ম আপু (বর্তমানে পালগিরী স্কুলের শিক্ষিকা) বলতো ফারুক অংকও মুখস্ত বলতে পারে । মরিয়ম আপু আমার আগের ব্যাচের না হলে অংকে বোর্ড পরীক্ষা পাশ করতে পারতাম না । কারন স্কুলে বি.এস.সি শিক্ষক ছিলোনা । যিনি ছিলেন এখনও আছেন তিনি নামের, কামের না । আমি কলেজে যখন পড়ি তখন একের শিক্ষদের পাঠদান পাওয়াতে আমি প্রস্ফুটিত হতে শুরু করি । কলেজ স্যাররা লক্ষ্য রাখতে শুরু করলেন বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে আমাকে । স্যাররা যে কোন টপিকস একবার বুজালে আমি বুজতাম হয় তো তাই ।
একদিন আমার কলেজের বন্ধু কাওছার (বর্তমানে মেরিন ইঞ্জিঃ) বলে মামা তুই হালারপোলার লগে জিন আছে পড়া লেখা করতে দেখিনা পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট ক্লাস টেস্টও বরাবর ভালো করো । কলেজ থেকে আশার পর টেবিলে বসি রাত একটা পর্যন্ত পড়েও পড়া শেষ করতে পারিনা, মামা তোর রহস্যটা কি তাড়াতাড়ি পড়া মুখস্ত করার?
আমি বললাম রহস্য তো আছে দেখনা বিকালে কলেজ থেকে আসার পর আমি বের হয়ে যাই রুম থেকে, কোথায় যাই?
হ্যাঁ মামা সত্যিইতো, কই যাস মামা? রেজাউল(উপজেলা সমাজ কল্যান অফিসার, নরসিংদি) আমাদের কথকোপথন শুনতেছে কিছুই বলছেনা ।
ঔষধ খাইতে যাই বুদ্ধির ঔষধ । রেজাউল সাথে সাথে বলে উঠলো মামা আমারেও নিয়ে গেছে কয়দিন ।
কাউছার লাফ দিয়ে পায়ে ধরে বলা শুরু করছে কাল আমারে তুই বুদ্ধির ঔষধ খাওয়াতে নিবি মামা প্লীজ।
পা ছাড় চিন্তা করে দেখি ।
চিন্তা টিন্তা বুঝি না কালকে আমারে নিবি কথা দেয় তাহলে পা ছাড়বো ।
রেজাউল হাসতে হাসতে পড়ে যায় আর বলতেছে দয়াল বাবা, পোলাটার দিকে তাকাইয়া একবার দেন ঔষধ খাওয়ার সুযোগ । আমি বললাম উঠ পা ছাড় আর খরচ করা লাগবে কিন্তু ঔষধের জন্য ।
মামা তুই যা বলবি তাই হবে কত টাকা লাগবে?
জানি না আমার জন্য যেই রেট তোর জন্য সেই রেট না ও হতে পারে কাল গেলে দেখবি । আচ্ছা আমি আমার রুমে গেলাম এখন পড় কাল কেরটা কালকে দেখা যাবে । রুমে ডুকতে না ডুকতে রেজাউল পেছন দিয়ে হাজির মামা আমি তো তোর কথার সাথে তাল মিলেয়ে বলেছি আমিও ঔষধ খাইছি ও তো ধরছে জিনিসটা কি ঔষধ আমি কি বলবো ?
তুই গিয়ে বল যে বলা যাবে না তোমারটা তুমি বাস্তবে গিয়ে দেখবা ।
পরদিন কলেজ থেকে আসার পর ও আর পিছ ছাড়ছেনা তারে ফাঁকিও দিতে পারছিনা, কি করবো বুঝেতে পারছিনা এর মধ্যে রেজাউল এসে হাজির । আমার মাথায় চট করে এর একটা সমাধান এসে গেল । রেজাউলকে বললাম কাউছারে ডাক আর আমি যা যা করি সব কিছুতে তুই হ হ করবি । আচ্ছা ঠিক আছে মামু তুই যেদিক আমিও ঐ দিকে ।
কাউছারকে ডাকলাম । আমার সামনে বুদ্ধির রুগি হাজির ঔষধ খেতে যাবে । জিজ্ঞাসা করলাম কত টাকা আছে পকেটে?
মামা এক হাজার আছে আরো লাগবে ?
না চলবে, লাগলে আমরা আছি তো চল ।
মেঘলা আকাশ বৃষ্টি নামবে নামবে ভাব নামছে না । সান্তনা সিনেমা হলের পাশের ছিপা রাস্তা ধরে হকার্স মার্কেটের গলি দিয়ে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে এ দিক ঐ দিক কিছুক্ষন হাটাহাটি করে ঐখান থেকে চলে আসলাম মেইন রোডে । বড় মসজিদ বরাবর আসতেই আকাশ ভেঙ্গে নামলো বৃষ্টি দৌড়ায়ে গাউছিয়া হোটেল ডুকলাম । গাউছিয়া হোটেলের মালিক বাবুল ভাই আমাকে দেখে বলে কিরে ভিজে তো চুপচপ হয়ে গেলি । বাবুল ভাইয়ের দিকে হাসি দিয়ে বললাম ভাই বাসা থেকে চা খাইতে দৌড়ায়ে আসছি । আচ্ছা যা তোর জন্য আজ চায়ের দাম ফ্রি । বাবুল ভাইয়েরে ধন্যবাদ দিয়ে তিনজনে কেবিনে গিয়ে বসলাম । কাউছার হতভম্ব গাউছিয়ার মালিক বাবুল চা ফ্রি অফার করে । বাবুল ভাইয়ের সাথে ওনাদের ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে ভারত পাকিস্তানের ম্যাচ দেখতে গিয়ে পরিচয় । আমি পাকিস্তানের সাপোর্ট করি বাবুল ভাইও পাকিস্তানের সাপোর্টার সেই সুবাদে মাঝে মাঝে খেলা দেখতে যেতাম রেজাউল ও যেত । তাই রেজাউল হতভম্ব না হয়ে পান্তা ভাতের মত সরল মেনে আমার পাশ দিয়ে বসলো ।
আচ্ছা বাবুল ভাই ফ্রি চা খাওয়াতে চায় আমরা অন্য কিছু খাই তোরা কি বলিস? একটা ব্যপার আছে না বললেই খেতে হবে এমন তো না ।
কাউছার আমার সমর্থন দিয়ে বলে মালিক বলছে এতে অনেক কিছু আমরা অন্য কিছু খাই আজকে চা খাবোই না ।
বেরি গুড ভাগিনা । হোটেল বয় রে হাত ইশরায় ডাকলাম । আমাদের তিনজন কে তিনটা করে মিষ্টি আর এক প্লেট করে দধি দেন । খাওয়া দাওয়া শেষে বিল আমি দিতে চাইলাম কাউছার দিতে দিলো না ও দিয়ে দিলো । বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়ে গেছে, বাসার দিকে যাচ্ছি কাউছারকে উদ্দেশ্য করে বলতেছি শোন মামা ঔষধ যে চাচা দেয় ওনারে তো খুঁজে ফেলাম না কালকে আবার আসবো ঔষধের জন্য । রেজাউল মহাখুশি মিষ্টি দই পেটে পড়ছে তাই ।
পরদিন যথাযথ ভাবে খোঁজাখুঁজি করলাম কিন্তু চাচাকে খুঁজে পাইনা । আমার চেহারায় চিন্তার চাপ এমন ভাব চাচার কিছু একটা হয়েছে । কাউছার আমারে সান্তনা দেয় মানুষের অসুখ বিসুখ হতে পারে না আজ না পাই অন্যদিন খুঁজে পাবো এতে টেনশন নেওয়ার কিছু নাই । মনে মনে বলি বলদ চাচা পাবো কোথায় এ রকমের ঔষধ দেওয়া চাচা তো মিথ্যের ভাসমান কল্পনায় । আমি চাচার চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দিয়েছি ভাবখানা নিয়ে বললাম চল আজ আমি দই মিষ্টি খাওয়াই ।
এভাবে সপ্তাহখানেক চাচারে খুঁজি বুদ্ধির ঔষধের জন্য । চাচারে খুঁজে যেহেতু পাইনা তাই চাচার মৃত্যু ঘটিয়ে দিলাম চাচা মরে গেছে আর না হয় দূরে অন্য কোথায়ও চলে গেছে । কাউছার তাই মেনে নিয়েছে । পুরো সপ্তাহের দই মিষ্টির বিল আমি একদিন দিয়েছি বাকি ছয়দিন কাউছার দিয়েছে বুদ্ধির ঔষধের আশায় আমাকে দিতে দেয়নি ।
দুই তিন সপ্তাহ পরে কাউছারকে বললাম তোর তো পড়ালেখা এখন মোটামুটি ভালই হচ্ছে?
হ্যাঁ মামা আপনে দোয়া দিয়েছেন তাই সর্টকার্ট মুখস্ত হচ্ছে । হাসতে হাসতে ওর গায়ে পড়ে গেলাম বললাম বোকা মিষ্টি মানুষের ব্রেন সার্প করে টানা এক সপ্তাহ মিষ্টি খাইছো তার ফল এখন উপলদ্ধি করতেছো । চাচা, বুদ্ধির ঔষধ এগুলো সব ছিলো সাজানো হা হা হা ।
অনলাইনে উপস্থিত | |
সদস্য: ০ | অতিথি: ১ |
২১৩৮৭ | |
আজ | ৩ |
গতকাল | ২১ |
এই সপ্তাহে | ৪১ |
এই মাসে | ১৪২ |